রাতের আলো
এক রাতে, গ্রামের সীমানায় পুরনো বটগাছের নিচে বসে ছিল শ্যামল। বয়স তার পঁচিশের কাছাকাছি, কিন্তু মনটা যেন এখনো কিশোর। গ্রামের লোকজন বলত, শ্যামলের চোখে নাকি জাদু আছে। সে যখন গল্প বলত, মনে হতো সব সত্যি। সেদিনও সে একা বসে আকাশের তারা গুনছিল। হঠাৎ একটা উজ্জ্বল আলো তার চোখে পড়ল। দূরের মাঠের মাঝখানে, যেখানে কেউ যায় না, সেখানে একটা নীলচে আলো জ্বলছিল।
শ্যামলের কৌতূহল জাগল। সে উঠে হাঁটতে শুরু করল। মাঠের ঘাস তার পায়ে শিশিরের ঠান্ডা ছোঁয়া দিচ্ছিল। কাছে গিয়ে দেখল, আলোটা একটা ছোট্ট পাথর থেকে আসছে। পাথরটা মাটিতে আধা-গাঁথা, অদ্ভুত নকশায় খোদাই করা। শ্যামল হাত দিতেই পাথরটা গরম হয়ে উঠল, আর একটা মৃদু কণ্ঠস্বর শোনা গেল, “যে আমাকে খুঁজে পায়, তার একটা ইচ্ছা পূরণ হয়। কিন্তু বিনিময়ে কিছু দিতে হয়।”
শ্যামল ভয় পেল, কিন্তু তার মনের গভীরে একটা ইচ্ছা জেগে উঠল। তার মা, যিনি বছর দুয়েক হল অসুস্থ, তাকে সুস্থ দেখতে চায় সে। সে বলে উঠল, “আমার মাকে সুস্থ করে দাও।” কণ্ঠস্বরটা আবার বলল, “তোমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস দিতে হবে।” শ্যামলের কাছে সবচেয়ে প্রিয় ছিল তার বাঁশি। সেই বাঁশিতে সে গান বাজাত, গ্রামের মানুষ মুগ্ধ হতো। কিন্তু মায়ের জন্য সে বাঁশিটা মাটিতে রেখে দিল।
পরদিন সকালে, শ্যামল দেখল তার মা হাসিমুখে রান্নাঘরে কাজ করছেন। গ্রামের লোকজন অবাক। কিন্তু শ্যামলের মন খারাপ। বাঁশি ছাড়া তার গল্পগুলো যেন ফিকে। রাতে সে আবার মাঠে গেল। পাথরটা ছিল না। কিন্তু তার জায়গায় একটা নতুন বাঁশি পড়ে ছিল, যার শব্দ শ্যামলের আগের বাঁশির চেয়েও মিষ্টি।
গ্রামের লোকজন বলে, শ্যামলের গল্প এখন আরো জাদুময়। আর শ্যামল জানে, কখনো কখনো ত্যাগের বিনিময়ে জীবন নতুন আলো দেয়।