Upgrade to Pro

আপনার অনুমতি নেই

পবিত্র আল-কোরআন নাজিলের ইতিহাস


পবিত্র আল-কোরআন নাজিলের ইতিহাস-

ইসলামের প্রধান ধর্মগ্রন্থ আল-কোরআন মুসলিমদের জন্য পথপ্রদর্শক এবং আল্লাহর বাণী। এর নাজিল বা অবতীর্ণ হওয়ার প্রক্রিয়াটি ছিল দীর্ঘ ২৩ বছরের। এই সময়কালে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে ধাপে ধাপে কোরআন অবতীর্ণ করেন।

আল-কোরআন

কোরআন নাজিলের প্রেক্ষাপট

ইসলাম-পূর্ব আরবে অজ্ঞতা, কুসংস্কার, পৌত্তলিকতা এবং নৈতিক অবক্ষয় চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। এমতাবস্থায় মানবজাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ঐশী কিতাবের প্রয়োজন ছিল। আর এই প্রয়োজনের তাগিদেই কোরআন নাজিল শুরু হয়।

প্রথম ওহী নাজিল

নবুওয়ত লাভের পূর্বে হযরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কার হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। নবুওয়তের ৪০ বছর বয়সে ৬১০ খ্রিস্টাব্দের রমজান মাসে (মতান্তরে ২৭ রজব) এক রাতে তিনি হেরা গুহায় ধ্যান করছিলেন। এসময় ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) তাঁর কাছে আসেন এবং তাঁকে পড়তে বলেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.) উত্তর দেন যে তিনি পড়তে জানেন না। জিবরাইল (আ.) তাঁকে তিনবার আলিঙ্গন করে ছেড়ে দেন এবং বলেন:

"পড়ো তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিণ্ড থেকে। পড়ো, আর তোমার রব মহা সম্মানিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।" (সূরা আলাক, আয়াত ১-৫)

এগুলোই ছিল আল-কোরআনের প্রথম নাজিলকৃত আয়াত। এই ঘটনাটি ছিল ইসলামের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত এবং নবুওয়তের সূচনা।

ধাপে ধাপে কোরআন নাজিল

কোরআন একবারে সম্পূর্ণরূপে নাজিল হয়নি। বরং প্রয়োজন অনুযায়ী, বিভিন্ন ঘটনা ও পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা আয়াত বা সূরার অংশবিশেষ নাজিল করতেন। এই ধাপে ধাপে নাজিলের পেছনে বেশ কিছু তাৎপর্য ছিল:

  • সহজবোধ্যতা: এতে সাহাবীগণের পক্ষে কোরআনের অর্থ ও বিধান বোঝা এবং আত্মস্থ করা সহজ হয়েছিল।
  • মানসিক প্রস্তুতি: নতুন বিধানগুলো গ্রহণে মানুষের মানসিক প্রস্তুতি তৈরি হয়েছিল।
  • সমস্যার সমাধান: তাৎক্ষণিক সমস্যাগুলোর ঐশী সমাধান পাওয়া যেত।
  • স্মরণ ও সংরক্ষণ: আয়াতগুলো মুখস্থ করা এবং লিপিবদ্ধ করা সহজ হয়েছিল।

মক্কী ও মাদানী সূরা

কোরআনের আয়াতসমূহকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়:

  • মক্কী সূরা: হিজরতের পূর্বে মক্কায় নাজিলকৃত সূরাগুলো মক্কী সূরা নামে পরিচিত। এই সূরাগুলোতে সাধারণত তাওহীদ (একত্ববাদ), আখিরাত, নবুওয়ত এবং মৌলিক নৈতিক শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই সময়কালে মুসলমানদের সংখ্যা কম ছিল এবং তাদের উপর অত্যাচার বেশি হত।
  • মাদানী সূরা: হিজরতের পর মদিনায় নাজিলকৃত সূরাগুলো মাদানী সূরা নামে পরিচিত। এই সূরাগুলোতে ইসলামী শরীয়তের বিস্তারিত বিধানাবলী, রাষ্ট্র পরিচালনা, সামাজিক আইন, যুদ্ধ ও সন্ধির নিয়মাবলী ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসময় মুসলিম উম্মাহ একটি পূর্ণাঙ্গ সমাজে পরিণত হয়েছিল।

কোরআন সংরক্ষণের প্রক্রিয়া

কোরআন নাজিলের সময় থেকেই এর সংরক্ষণ শুরু হয়। মহানবী (সা.) নিজেই ওহী লিপিবদ্ধ করার জন্য কাতেবীন-ই-ওহী (ওহী লেখক) নিযুক্ত করেছিলেন। সাহাবীগণ খেজুর পাতা, পাথরের টুকরা, চামড়া এবং হাড়ের উপর কোরআনের আয়াত লিপিবদ্ধ করতেন। একই সাথে, অসংখ্য সাহাবী কোরআনের আয়াত মুখস্থ করে রাখতেন, যাদেরকে হাফিজ বলা হতো।

মহানবী (সা.)-এর ওফাতের পর, প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা.)-এর খেলাফতকালে ইয়ামামার যুদ্ধে বহু হাফিজে কোরআন শহীদ হন। এতে কোরআন হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় হযরত উমর (রা.)-এর পরামর্শে হযরত আবু বকর (রা.) কোরআনকে এক গ্রন্থে সংকলনের নির্দেশ দেন। এই দায়িত্বভার অর্পণ করা হয় হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রা.)-এর উপর।

পরবর্তীতে তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান (রা.)-এর সময়কালে কোরআনের বিভিন্ন কিরাআত (পাঠের পদ্ধতি) নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে তিনি একটি প্রামাণ্য কপি তৈরি করার নির্দেশ দেন, যা মুসহাফে উসমানী নামে পরিচিত। এই কপিটিই বর্তমানে সারা বিশ্বে অনুসৃত হয়।

কোরআনের চিরন্তনতা

আল-কোরআন নাজিলের এই দীর্ঘ প্রক্রিয়াটি আল্লাহর অসীম জ্ঞান ও পরিকল্পনারই অংশ। কোরআন শুধু একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, এটি মানবজাতির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, যা কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য অপরিবর্তনীয় ও শাশ্বত পথপ্রদর্শক হিসেবে বিদ্যমান থাকবে।

আশা করি, এই ব্লগ পোস্টটি পবিত্র আল-কোরআন নাজিলের ইতিহাস সম্পর্কে আপনার ধারণা পরিষ্কার করতে সাহায্য করেছে। কোরআন সম্পর্কে আপনার আরও কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।

Love
Like
3
Jono Sathi - Bangladeshi Social Media Platform https://jonosathi.com