নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ। ঈমানের পরেই এর স্থান। পবিত্র কুরআন এবং অসংখ্য হাদিসে নামাজের গুরুত্ব বারবার উল্লেখ করা হয়েছে।

• আল্লাহর নির্দেশ: আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের প্রায় ৮২টি স্থানে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। এটি প্রমাণ করে, আল্লাহর কাছে নামাজ কতটা প্রিয় ও অপরিহার্য।
• সর্বপ্রথম হিসাব: কিয়ামতের দিন বান্দার আমলসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। যার নামাজের হিসাব সহজ হবে, তার জন্য অন্যান্য হিসাবও সহজ হয়ে যাবে।
• পাপ মোচনকারী: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বান্দার সগীরা গুনাহসমূহ মোচন করে দেয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজানের মধ্যবর্তী সময়ে সংঘটিত সকল গুনাহ মোচনকারী, যদি কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা হয়।" (বুখারী ও মুসলিম)
• অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে: নামাজ মানুষকে অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, "নিঃসন্দেহে সালাত (মানুষকে) অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।" (সূরা আনকাবুত: ৪৫)
• মুমিনের মি'রাজ: নামাজকে মুমিনের মি'রাজ বলা হয়েছে। নামাজের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে পারে এবং সরাসরি আল্লাহর সাথে কথোপকথন করতে পারে।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজীলত

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের অসংখ্য ফজীলত রয়েছে, যা আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে ব্যাপক কল্যাণ বয়ে আনে।

• জান্নাত লাভের সুসংবাদ: যারা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে। বিশেষ করে ফজরের নামাজ আদায়কারীকে জান্নাতি মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
• গুনাহ মাফ: রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একটি উপমা দিয়ে বলেছেন, "যদি তোমাদের কারো ঘরের সামনে একটি নদী থাকে আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তাহলে তার শরীরে কি কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকবে? সাহাবারা বললেন, না, কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, এটাই হলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের দৃষ্টান্ত, যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।" (বুখারী)
• ফেরেশতাদের সাক্ষ্য: ফজরের নামাজে ফেরেশতাদের উপস্থিতি থাকে এবং তারা নামাজ আদায়কারীর জন্য সাক্ষ্য দেন।
• দুর্গতি থেকে মুক্তি: বিপদে আপদে ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নামাজ মানুষের মনকে শান্ত ও প্রশান্ত রাখে।
• নূর ও সফলতা: কিয়ামতের দিন নামাজ আদায়কারীর জন্য নূর বা আলো থাকবে। যারা নামাজে বিনয়াবনত থাকে, আল্লাহ তাদের সফলকাম হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
• সর্বোত্তম আমল: আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম- "আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় আমল কোনটি?" রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, "নামাজ"। (বুখারী ও মুসলিম)

উপসংহার

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শুধু একটি ফরজ ইবাদত নয়, বরং এটি আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। নামাজ আমাদেরকে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে, আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে এবং ইহকাল ও পরকালে সফলতা অর্জন করতে সাহায্য করে। তাই আসুন, আমরা সবাই নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করি এবং আমাদের জীবনকে সুন্দর ও ফলপ্রসূ করে তুলি।

আপনি কি নামাজ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত কিছু জানতে চান, যেমন – নামাজের নিয়মকানুন, বিভিন্ন ওয়াক্তের ফজীলত, বা নামাজে খুশু-খুজু (একাগ্রতা) অর্জনের উপায়?