কবরের আযাব

কবরের আযাব: আল-কোরআনের আলোকে এক গভীর সত্য
কবর, মানবজীবনের এক অনিবার্য প্রবেশদ্বার। দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবন শেষে প্রতিটি আত্মাকেই এই নতুন ঠিকানায় প্রবেশ করতে হয়। আর এই কবরের জীবন কেমন হবে, তা নির্ভর করে দুনিয়ার জীবনে আমাদের কৃতকর্মের উপর। 'কবরের আযাব' বা কবরের শাস্তি একটি গভীর সত্য, যা আল-কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে উঠে এসেছে।
আল-কোরআনে সরাসরি 'কবরের আযাব' শব্দবন্ধটি উল্লেখ না থাকলেও, এর মর্মার্থ এবং ইঙ্গিত অনেক আয়াতেই বিদ্যমান। কোরআনুল কারিম মানবজাতিকে পরকালের জীবন, কিয়ামত, এবং কর্মফল সম্পর্কে বারবার সতর্ক করেছে। এটি স্পষ্ট করে যে, মৃত্যুর পর পুরস্কার বা শাস্তি শুরু হয় এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে।
ফেরাউনের দৃষ্টান্ত
কবরের আযাবের একটি শক্তিশালী ইঙ্গিত পাওয়া যায় সূরা গাফিরের ৪৬ নম্বর আয়াতে। আল্লাহ তা'আলা ফেরাউন ও তার অনুসারীদের শাস্তি সম্পর্কে বলেন:
"সকালে ও সন্ধ্যায় তাদেরকে আগুনের সামনে পেশ করা হয়। আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন বলা হবে: ফেরাউন গোত্রকে কঠিনতম আযাবে প্রবেশ করাও।" (সূরা গাফির: ৪৬)
এই আয়াতে 'সকালে ও সন্ধ্যায় আগুনের সামনে পেশ করা' দ্বারা অনেক মুফাসসিরিন কবরের আযাবকে বুঝিয়েছেন। এর অর্থ হলো, কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই অর্থাৎ কবরের জীবনেই ফেরাউন ও তার দলের উপর আযাব শুরু হয়ে গেছে এবং কিয়ামত দিবসে তাদের জন্য আরও কঠোর শাস্তি অপেক্ষা করছে।
বারযাখ জীবন
কোরআনে 'বারযাখ' শব্দের ব্যবহারও কবরের জীবনের প্রতি ইঙ্গিত করে। বারযাখ হলো ইহকাল ও পরকালের মধ্যবর্তী একটি অন্তর্বর্তীকালীন অবস্থা। সূরা মুমিনুন-এর ৯৯ ও ১০০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
"অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয়, সে বলে, 'হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ফিরিয়ে দাও। যাতে আমি সৎ কাজ করতে পারি, যা আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম।' কখনই নয়, এটা তো শুধু একটি কথা, যা সে বলবে। আর তাদের সামনে রয়েছে বারযাখ, পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।" (সূরা মুমিনুন: ৯৯-১০০)
এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, মৃত্যুর পর কিয়ামত পর্যন্ত আত্মারা একটি বিশেষ অবস্থায় থাকে, যা বারযাখ নামে পরিচিত। এই বারযাখ জীবনেই নেককাররা শান্তি পায় এবং পাপীরা শাস্তি ভোগ করে।
মন্দ কর্মের পরিণতি
কোরআনের অসংখ্য আয়াতে মন্দ কর্মের জন্য শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এই শাস্তি দুনিয়াতে যেমন হতে পারে, তেমনি আখিরাতেও। কবরের আযাব আখিরাতের শাস্তির একটি অংশ। যারা দুনিয়াতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হয়েছে, পাপাচারে লিপ্ত ছিল, তাদের জন্য কোরআন শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এই শাস্তি শুরু হয় কবর থেকেই।
আমাদের করণীয়
কবরের আযাব থেকে মুক্তি পেতে হলে আল-কোরআনের নির্দেশনা মেনে চলা অপরিহার্য। কোরআন আমাদের সৎকর্মশীল হতে, আল্লাহকে ভয় করতে, নামাজ কায়েম করতে, যাকাত দিতে, মিথ্যা ও অন্যায় থেকে দূরে থাকতে এবং অন্যের প্রতি সদয় হতে নির্দেশ দিয়েছে। যারা কোরআনের এই বিধানগুলো অনুসরণ করবে, তাদের কবর আলোকিত হবে এবং তারা আল্লাহর রহমত লাভ করবে। আর যারা মুখ ফিরিয়ে নেবে, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন পরিণতি।
কবরের আযাব আমাদের জন্য একটি স্মরণীয় বার্তা। এটি আমাদের দুনিয়ার জীবনে সচেতন করে তোলে, পরকালের জন্য প্রস্তুত হতে উৎসাহিত করে। তাই আসুন, আল-কোরআনের আলোকে নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করি এবং কবরের আযাব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই।
এই বিষয়ে আপনার কি আরও কিছু জানার আছে?
