অহংকার: ইবলিসের পতন এবং আমাদের শিক্ষাঃ

ইসলামে অহংকার একটি জঘন্যতম পাপ। এটি মানুষকে আল্লাহ থেকে দূরে ঠেলে দেয় এবং সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। অহংকারের কুফল বোঝানোর জন্য ইবলিসের ঘটনা একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

আল্লাহ তায়ালা যখন আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করলেন, তখন তিনি ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলেন আদমকে সেজদা করতে। সকল ফেরেশতা আল্লাহর আদেশ পালন করলেন, কিন্তু ইবলিস অস্বীকার করল। সে বলল, "আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।" ইবলিসের এই উক্তি ছিল অহংকার এবং দাম্ভিকতার বহিঃপ্রকাশ। সে নিজেকে আদমের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করেছিল এবং আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছিল।

অহংকারের পরিণতি

ইবলিসের অহংকারের পরিণতি ছিল ভয়াবহ। আল্লাহ তাকে জান্নাত থেকে বহিষ্কার করলেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাকে অভিশপ্ত করলেন। ইবলিস শুধু নিজেই পথভ্রষ্ট হয়নি, বরং সে মানুষকেও পথভ্রষ্ট করার শপথ নিল। আজও সে মানুষকে বিভিন্নভাবে কুমন্ত্রণা দিয়ে অহংকার ও অন্যান্য পাপে লিপ্ত করার চেষ্টা করে।

আমাদের শিক্ষা

ইবলিসের এই ঘটনা থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। অহংকার মানুষকে অন্ধ করে দেয়। অহংকারী ব্যক্তি নিজেকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করে এবং অন্যের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করে। সে আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর আদেশ অমান্য করে। অহংকার মানুষকে জ্ঞান অর্জনে বাধা দেয়, কারণ অহংকারী ব্যক্তি মনে করে সে সব জানে।

ইসলাম অহংকার থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয়। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, "নিশ্চয় আল্লাহ কোনো অহংকারী, দাম্ভিককে পছন্দ করেন না।" (সূরা লুকমান: ১৮)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।" (সহীহ মুসলিম)।

অহংকার মুক্তির পথ

অহংকার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের বিনয়ী হতে হবে। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে হবে এবং তাঁর নেয়ামতকে স্বীকার করতে হবে। নিজেদের ভুল স্বীকার করতে হবে এবং অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর দান। কোনো কিছুতেই আমাদের নিজস্ব শ্রেষ্ঠত্ব নেই।

আমরা যদি অহংকার থেকে দূরে থাকতে পারি, তাহলে আমাদের জীবন সুন্দর হবে এবং আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারব।