গল্পের নাম: “শেষ বেঞ্চের ভালোবাসা”
১. শুরুটা সরল
নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রথম দেখেছিলাম তাকে। নাম তার রাইনা। আমাদের স্কুলে নতুন ভর্তি হয়েছিল, আর আমার ঠিক দুই বেঞ্চ সামনে বসত। প্রথম দিনেই নজরে পড়েছিল, তবে ঠিক প্রেম বলবো না, কৌতূহল হয়েছিল। সাদামাটা পোশাকে, চুলে বেণি, মুখে যেন এক ধরনের শান্ত প্রশান্তি।
প্রথম কিছুদিন তার সাথে কথা হয়নি। শুধু দূর থেকে তাকিয়ে দেখা, কখনো চোখাচোখি হলে হালকা হাসি। সে হাসি যেন কোনো একটা নিঃশব্দ গল্প বলে যেত।
---
২. ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব
দশম শ্রেণির শুরুর দিকে ক্লাসের গ্রুপ প্রজেক্টে আমরা এক টিমে পড়লাম। কথা শুরু হলো—খুব সাধারণ, বই-খাতা, পড়াশোনার কথা। কিন্তু তারপর সেই কথাগুলো বদলে গেলো। টিফিন ভাগ করে খাওয়া, একসাথে লাইব্রেরিতে পড়া, মাঝে মাঝে ক্লাস শেষে গেটের বাইরে দু’মিনিটের দেখা—সব মিলিয়ে এক ধরণের অভ্যস্ততা গড়ে উঠলো।
সে একদিন বলেছিল, “তুই জানিস, তোর পাশে বসলে আমার মাথা ঠাণ্ডা হয়ে যায়।”
আমি কিছু বলিনি, শুধু মুচকি হেসেছিলাম।
---
৩. ভালোবাসার স্বীকৃতি
একদিন স্কুলে বসন্ত উৎসব হচ্ছিল। আমি সাহস করে একটা হলুদ গাঁদা ফুল নিয়ে গেলাম। ওর চুলে গুঁজে দিলাম। কিছুই বলিনি, ওও কিছু বলেনি, শুধু চোখ দুটো অদ্ভুত ভরে উঠেছিল। সেদিন দুপুরে, স্কুল ছুটির পর, আমরা গেটের কাছে একটা পুরোনো কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সে বলেছিল, “তুই ছাড়া আর কারো সাথে এতটা স্বস্তিতে থাকতে পারি না…”
সেদিনই প্রথম বুঝেছিলাম, এটাই প্রেম।
---
৪. প্রথম প্রপোজ
শীতের বিকেল, স্কুল শেষে সবাই বাড়ি চলে গেছে। আমরা দু’জন লাইব্রেরির পেছনের পুরোনো কাঁঠাল গাছটার নিচে বসে ছিলাম। পাতা ঝরার শব্দ, দূরে পাখির ডাকা—সব মিলিয়ে অদ্ভুত শান্ত একটা মুহূর্ত।
আমার হাতের তালু ঘামছিল। রাইনার দিকে তাকাতে পারছিলাম না। ও তখন গল্প করছিল, কীভাবে সে ছোটবেলায় নদীর পাড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকত—শুধু আকাশ দেখার জন্য।
আমি হঠাৎ থেমে বললাম,
“রাইনা, একটা কথা বলব, রাগ করবি না তো?”
ও অবাক হয়ে বলল, “রাগ করব কেন? বল।”
আমি অনেক কষ্টে বললাম,
“তোর সাথে কথা না বললে, তোর মুখ না দেখলে, আমার দিনটা যেন ঠিকভাবে শুরুই হয় না। তুই পাশে না থাকলে কেমন জানি শূন্য শূন্য লাগে। আমি জানি না এটা কী, কিন্তু… আমি তোকে খুব পছন্দ করি। খুব।”
রাইনা কিছুক্ষণ চুপ করে ছিল। চোখ নামিয়ে শুধু বলল,
“তুই জানিস, আমি প্রতিদিন স্কুলে আসার আগে একবার আয়নায় তাকিয়ে ভাবি—আজকে তুই তাকাবি তো? কথা বলবি তো? আমি প্রতিদিন এই ভেবেই সাজি।”
আমরা দু’জনই তখন কাঁঠাল পাতায় ছায়া মিশে থাকা বিকেলে বসে ছিলাম। কোনো শব্দ ছিল না, শুধু একধরনের নিশ্চুপ সম্মতি, চোখের ভাষা। আমার হাত বাড়িয়ে ছিলাম, ও ধীরে ধীরে হাতটা ধরেছিল।
সেই মুহূর্তটা ছিল, আমাদের জীবনের প্রথম ‘প্রেমের ঘোষণা’। কোনো উচ্চ কণ্ঠে নয়, কোনো নাটকীয়তায় নয়—শুধু দু’জন কিশোর-মন এক হয়ে যাওয়ার মুহূর্ত।
---
৫. প্রথম ঝগড়া ও বোঝাপড়া
ভালোবাসা যত গভীর হয়, মনের টানাপোড়েনও ততটা বাড়ে। একদিন একটা ভুল বোঝাবুঝি থেকে বড় একটা ঝগড়া হয়ে গেল।
একটা নোটবুক হারিয়ে গিয়েছিল, যেটা রাইনা আমাকে দিয়েছিল পড়ার জন্য। আমি খেয়াল না করে হারিয়ে ফেলেছিলাম। ওর রাগ গিয়ে পড়েছিল চোখে-মুখে। কথা বলছিল না, পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল।
তিন দিন ওর সাথে কোনো কথা হয়নি। মনে হচ্ছিল, যেন বুকের ভেতর কিছু ভারী হয়ে আছে।
চতুর্থ দিনে আমি চুপচাপ তার ডেস্কে বসে ছিলাম, আর টিফিনের ভেতর ছোট একটা চিঠি রেখে দিয়েছিলাম:
"তোর নোটবুকটা হয়তো হারিয়েছি, কিন্তু তোর স্মৃতি, তোর প্রতিটা শব্দ এখনো আমার সাথে। রাগ করে থাকিস, তবু ফিরিস।"
ও পড়েছিল চিঠিটা। ফিরে তাকিয়ে একটা হালকা হাসি দিয়েছিল। আর পরদিন সকালে আমার ব্যাগে একটা চকলেট পাই—চুপচাপ ক্ষমা পাওয়ার চিহ্ন।
---
৬. সেই বিশেষ মুহূর্ত
একদিন হঠাৎ খবর এলো ওর বাবা বদলি হয়েছে—ওদের পরিবার অন্য শহরে চলে যাচ্ছে। আমাদের জীবনের সবচেয়ে কষ্টদায়ক দিনটা ছিল সেই বিদায়ের দিনটা।
ও বলেছিল, “তুই জানিস, স্কুলের প্রতিটা দিন আমি শুধুই তোর জন্য ভালোবাসতে শিখেছি। কিন্তু এখন কিছুই করার নেই।”
আমি কিছু বলতে পারিনি। শুধু হাত ধরে ছিলাম অনেকক্ষণ।
শেষবারের মতো আমাদের দু’জনের চোখ একসাথে ভিজে উঠেছিল।
---
৭. বিদায়ের আগের দিন
রাইনা চলে যাওয়ার আগের দিন স্কুলে এসেছিল একরকম চুপচাপ ভাঙা চেহারায়। সে দিন ক্লাসে আসেনি, সোজা চলে গিয়েছিল ছাদে। আমি খুঁজতে খুঁজতে সেখানে গিয়ে দেখি, ও দাঁড়িয়ে আছে—হাওয়ায় চুল উড়ছে, চোখে জল।
আমি ধীরে কাছে গিয়ে বললাম, “আর একদিন থাক, প্লিজ।”
সে হাসল, ভেজা চোখে বলল, “থাকা যায় না রে… কিন্তু তুই জানিস, আমি যাব, কিন্তু প্রতিদিন এই স্কুলটাতে ফিরে আসবো… মনে মনে।”
আমরা তখন কিছু না বলেই পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেই নীরবতাই যেন ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় কথা।
---
৮. একটি চিঠি (বিদায়ের পরে)
ও চলে যাওয়ার দুই সপ্তাহ পরে ডাকপিয়নের হাতে একটা খাম এলো আমার নামে। রাইনার হাতের লেখা।
> _"তুই হয়তো ভাবছিস, আমি দূরে চলে গেছি। কিন্তু জানিস, আমি এখনো শেষ বেঞ্চে বসে থাকি—তোর পাশে। তোকে দেখে মন থেকে হাসি আসতো, এখন তা শুধুই স্মৃতি।
তুই হয়তো অনেক বড় হবে, অনেক দূর যাবি… কিন্তু আমার জীবনের সবচেয়ে স্নিগ্ধ মুহূর্তটা, তোর চোখে প্রথম প্রেম দেখা—সেটা আমি সবসময় বাঁচিয়ে রাখবো।
ভালো থাকিস রে। সবসময়।
—রাইনা"_
আমি চিঠিটা পড়ে অনেকক্ষণ নিঃশব্দে বসে ছিলাম। মনে হচ্ছিল, ও এখনো কাছেই আছে।
---
৯. অনেক বছর পর…
আজ আমি নিজেই স্কুলে শিক্ষক। পুরোনো সেই স্কুলেই। মাঝে মাঝে আমি রাইনাদের বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে থাকি। সেখানে নতুন কিছু মুখ হাসে, কেউ কারো দিকে লুকিয়ে তাকায়, কেউ টিফিন ভাগ করে খায়।
কৃষ্ণচূড়া গাছটা এখনো আছে। আর তার ছায়ায় দাঁড়িয়ে আমি এখনো মাঝে মাঝে সেই দিনটার গন্ধ পাই।
প্রেম হয়তো এখনো রয়ে গেছে, কিন্তু সে প্রেম শুধুই স্মৃতিতে। কষ্টের মাঝেও একধরনের আনন্দ। কারণ, রাইনার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত এখনো আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায়।
এরাও সুন্দর সুন্দর গল্পে অবশ্যই আইডিতে ফলো দিয়ে পাশেই থাকুন শখের লেখক
১. শুরুটা সরল
নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রথম দেখেছিলাম তাকে। নাম তার রাইনা। আমাদের স্কুলে নতুন ভর্তি হয়েছিল, আর আমার ঠিক দুই বেঞ্চ সামনে বসত। প্রথম দিনেই নজরে পড়েছিল, তবে ঠিক প্রেম বলবো না, কৌতূহল হয়েছিল। সাদামাটা পোশাকে, চুলে বেণি, মুখে যেন এক ধরনের শান্ত প্রশান্তি।
প্রথম কিছুদিন তার সাথে কথা হয়নি। শুধু দূর থেকে তাকিয়ে দেখা, কখনো চোখাচোখি হলে হালকা হাসি। সে হাসি যেন কোনো একটা নিঃশব্দ গল্প বলে যেত।
---
২. ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব
দশম শ্রেণির শুরুর দিকে ক্লাসের গ্রুপ প্রজেক্টে আমরা এক টিমে পড়লাম। কথা শুরু হলো—খুব সাধারণ, বই-খাতা, পড়াশোনার কথা। কিন্তু তারপর সেই কথাগুলো বদলে গেলো। টিফিন ভাগ করে খাওয়া, একসাথে লাইব্রেরিতে পড়া, মাঝে মাঝে ক্লাস শেষে গেটের বাইরে দু’মিনিটের দেখা—সব মিলিয়ে এক ধরণের অভ্যস্ততা গড়ে উঠলো।
সে একদিন বলেছিল, “তুই জানিস, তোর পাশে বসলে আমার মাথা ঠাণ্ডা হয়ে যায়।”
আমি কিছু বলিনি, শুধু মুচকি হেসেছিলাম।
---
৩. ভালোবাসার স্বীকৃতি
একদিন স্কুলে বসন্ত উৎসব হচ্ছিল। আমি সাহস করে একটা হলুদ গাঁদা ফুল নিয়ে গেলাম। ওর চুলে গুঁজে দিলাম। কিছুই বলিনি, ওও কিছু বলেনি, শুধু চোখ দুটো অদ্ভুত ভরে উঠেছিল। সেদিন দুপুরে, স্কুল ছুটির পর, আমরা গেটের কাছে একটা পুরোনো কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সে বলেছিল, “তুই ছাড়া আর কারো সাথে এতটা স্বস্তিতে থাকতে পারি না…”
সেদিনই প্রথম বুঝেছিলাম, এটাই প্রেম।
---
৪. প্রথম প্রপোজ
শীতের বিকেল, স্কুল শেষে সবাই বাড়ি চলে গেছে। আমরা দু’জন লাইব্রেরির পেছনের পুরোনো কাঁঠাল গাছটার নিচে বসে ছিলাম। পাতা ঝরার শব্দ, দূরে পাখির ডাকা—সব মিলিয়ে অদ্ভুত শান্ত একটা মুহূর্ত।
আমার হাতের তালু ঘামছিল। রাইনার দিকে তাকাতে পারছিলাম না। ও তখন গল্প করছিল, কীভাবে সে ছোটবেলায় নদীর পাড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকত—শুধু আকাশ দেখার জন্য।
আমি হঠাৎ থেমে বললাম,
“রাইনা, একটা কথা বলব, রাগ করবি না তো?”
ও অবাক হয়ে বলল, “রাগ করব কেন? বল।”
আমি অনেক কষ্টে বললাম,
“তোর সাথে কথা না বললে, তোর মুখ না দেখলে, আমার দিনটা যেন ঠিকভাবে শুরুই হয় না। তুই পাশে না থাকলে কেমন জানি শূন্য শূন্য লাগে। আমি জানি না এটা কী, কিন্তু… আমি তোকে খুব পছন্দ করি। খুব।”
রাইনা কিছুক্ষণ চুপ করে ছিল। চোখ নামিয়ে শুধু বলল,
“তুই জানিস, আমি প্রতিদিন স্কুলে আসার আগে একবার আয়নায় তাকিয়ে ভাবি—আজকে তুই তাকাবি তো? কথা বলবি তো? আমি প্রতিদিন এই ভেবেই সাজি।”
আমরা দু’জনই তখন কাঁঠাল পাতায় ছায়া মিশে থাকা বিকেলে বসে ছিলাম। কোনো শব্দ ছিল না, শুধু একধরনের নিশ্চুপ সম্মতি, চোখের ভাষা। আমার হাত বাড়িয়ে ছিলাম, ও ধীরে ধীরে হাতটা ধরেছিল।
সেই মুহূর্তটা ছিল, আমাদের জীবনের প্রথম ‘প্রেমের ঘোষণা’। কোনো উচ্চ কণ্ঠে নয়, কোনো নাটকীয়তায় নয়—শুধু দু’জন কিশোর-মন এক হয়ে যাওয়ার মুহূর্ত।
---
৫. প্রথম ঝগড়া ও বোঝাপড়া
ভালোবাসা যত গভীর হয়, মনের টানাপোড়েনও ততটা বাড়ে। একদিন একটা ভুল বোঝাবুঝি থেকে বড় একটা ঝগড়া হয়ে গেল।
একটা নোটবুক হারিয়ে গিয়েছিল, যেটা রাইনা আমাকে দিয়েছিল পড়ার জন্য। আমি খেয়াল না করে হারিয়ে ফেলেছিলাম। ওর রাগ গিয়ে পড়েছিল চোখে-মুখে। কথা বলছিল না, পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল।
তিন দিন ওর সাথে কোনো কথা হয়নি। মনে হচ্ছিল, যেন বুকের ভেতর কিছু ভারী হয়ে আছে।
চতুর্থ দিনে আমি চুপচাপ তার ডেস্কে বসে ছিলাম, আর টিফিনের ভেতর ছোট একটা চিঠি রেখে দিয়েছিলাম:
"তোর নোটবুকটা হয়তো হারিয়েছি, কিন্তু তোর স্মৃতি, তোর প্রতিটা শব্দ এখনো আমার সাথে। রাগ করে থাকিস, তবু ফিরিস।"
ও পড়েছিল চিঠিটা। ফিরে তাকিয়ে একটা হালকা হাসি দিয়েছিল। আর পরদিন সকালে আমার ব্যাগে একটা চকলেট পাই—চুপচাপ ক্ষমা পাওয়ার চিহ্ন।
---
৬. সেই বিশেষ মুহূর্ত
একদিন হঠাৎ খবর এলো ওর বাবা বদলি হয়েছে—ওদের পরিবার অন্য শহরে চলে যাচ্ছে। আমাদের জীবনের সবচেয়ে কষ্টদায়ক দিনটা ছিল সেই বিদায়ের দিনটা।
ও বলেছিল, “তুই জানিস, স্কুলের প্রতিটা দিন আমি শুধুই তোর জন্য ভালোবাসতে শিখেছি। কিন্তু এখন কিছুই করার নেই।”
আমি কিছু বলতে পারিনি। শুধু হাত ধরে ছিলাম অনেকক্ষণ।
শেষবারের মতো আমাদের দু’জনের চোখ একসাথে ভিজে উঠেছিল।
---
৭. বিদায়ের আগের দিন
রাইনা চলে যাওয়ার আগের দিন স্কুলে এসেছিল একরকম চুপচাপ ভাঙা চেহারায়। সে দিন ক্লাসে আসেনি, সোজা চলে গিয়েছিল ছাদে। আমি খুঁজতে খুঁজতে সেখানে গিয়ে দেখি, ও দাঁড়িয়ে আছে—হাওয়ায় চুল উড়ছে, চোখে জল।
আমি ধীরে কাছে গিয়ে বললাম, “আর একদিন থাক, প্লিজ।”
সে হাসল, ভেজা চোখে বলল, “থাকা যায় না রে… কিন্তু তুই জানিস, আমি যাব, কিন্তু প্রতিদিন এই স্কুলটাতে ফিরে আসবো… মনে মনে।”
আমরা তখন কিছু না বলেই পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেই নীরবতাই যেন ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় কথা।
---
৮. একটি চিঠি (বিদায়ের পরে)
ও চলে যাওয়ার দুই সপ্তাহ পরে ডাকপিয়নের হাতে একটা খাম এলো আমার নামে। রাইনার হাতের লেখা।
> _"তুই হয়তো ভাবছিস, আমি দূরে চলে গেছি। কিন্তু জানিস, আমি এখনো শেষ বেঞ্চে বসে থাকি—তোর পাশে। তোকে দেখে মন থেকে হাসি আসতো, এখন তা শুধুই স্মৃতি।
তুই হয়তো অনেক বড় হবে, অনেক দূর যাবি… কিন্তু আমার জীবনের সবচেয়ে স্নিগ্ধ মুহূর্তটা, তোর চোখে প্রথম প্রেম দেখা—সেটা আমি সবসময় বাঁচিয়ে রাখবো।
ভালো থাকিস রে। সবসময়।
—রাইনা"_
আমি চিঠিটা পড়ে অনেকক্ষণ নিঃশব্দে বসে ছিলাম। মনে হচ্ছিল, ও এখনো কাছেই আছে।
---
৯. অনেক বছর পর…
আজ আমি নিজেই স্কুলে শিক্ষক। পুরোনো সেই স্কুলেই। মাঝে মাঝে আমি রাইনাদের বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে থাকি। সেখানে নতুন কিছু মুখ হাসে, কেউ কারো দিকে লুকিয়ে তাকায়, কেউ টিফিন ভাগ করে খায়।
কৃষ্ণচূড়া গাছটা এখনো আছে। আর তার ছায়ায় দাঁড়িয়ে আমি এখনো মাঝে মাঝে সেই দিনটার গন্ধ পাই।
প্রেম হয়তো এখনো রয়ে গেছে, কিন্তু সে প্রেম শুধুই স্মৃতিতে। কষ্টের মাঝেও একধরনের আনন্দ। কারণ, রাইনার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত এখনো আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায়।
এরাও সুন্দর সুন্দর গল্পে অবশ্যই আইডিতে ফলো দিয়ে পাশেই থাকুন শখের লেখক
গল্পের নাম: “শেষ বেঞ্চের ভালোবাসা”
১. শুরুটা সরল
নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রথম দেখেছিলাম তাকে। নাম তার রাইনা। আমাদের স্কুলে নতুন ভর্তি হয়েছিল, আর আমার ঠিক দুই বেঞ্চ সামনে বসত। প্রথম দিনেই নজরে পড়েছিল, তবে ঠিক প্রেম বলবো না, কৌতূহল হয়েছিল। সাদামাটা পোশাকে, চুলে বেণি, মুখে যেন এক ধরনের শান্ত প্রশান্তি।
প্রথম কিছুদিন তার সাথে কথা হয়নি। শুধু দূর থেকে তাকিয়ে দেখা, কখনো চোখাচোখি হলে হালকা হাসি। সে হাসি যেন কোনো একটা নিঃশব্দ গল্প বলে যেত।
---
২. ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব
দশম শ্রেণির শুরুর দিকে ক্লাসের গ্রুপ প্রজেক্টে আমরা এক টিমে পড়লাম। কথা শুরু হলো—খুব সাধারণ, বই-খাতা, পড়াশোনার কথা। কিন্তু তারপর সেই কথাগুলো বদলে গেলো। টিফিন ভাগ করে খাওয়া, একসাথে লাইব্রেরিতে পড়া, মাঝে মাঝে ক্লাস শেষে গেটের বাইরে দু’মিনিটের দেখা—সব মিলিয়ে এক ধরণের অভ্যস্ততা গড়ে উঠলো।
সে একদিন বলেছিল, “তুই জানিস, তোর পাশে বসলে আমার মাথা ঠাণ্ডা হয়ে যায়।”
আমি কিছু বলিনি, শুধু মুচকি হেসেছিলাম।
---
৩. ভালোবাসার স্বীকৃতি
একদিন স্কুলে বসন্ত উৎসব হচ্ছিল। আমি সাহস করে একটা হলুদ গাঁদা ফুল নিয়ে গেলাম। ওর চুলে গুঁজে দিলাম। কিছুই বলিনি, ওও কিছু বলেনি, শুধু চোখ দুটো অদ্ভুত ভরে উঠেছিল। সেদিন দুপুরে, স্কুল ছুটির পর, আমরা গেটের কাছে একটা পুরোনো কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সে বলেছিল, “তুই ছাড়া আর কারো সাথে এতটা স্বস্তিতে থাকতে পারি না…”
সেদিনই প্রথম বুঝেছিলাম, এটাই প্রেম।
---
৪. প্রথম প্রপোজ
শীতের বিকেল, স্কুল শেষে সবাই বাড়ি চলে গেছে। আমরা দু’জন লাইব্রেরির পেছনের পুরোনো কাঁঠাল গাছটার নিচে বসে ছিলাম। পাতা ঝরার শব্দ, দূরে পাখির ডাকা—সব মিলিয়ে অদ্ভুত শান্ত একটা মুহূর্ত।
আমার হাতের তালু ঘামছিল। রাইনার দিকে তাকাতে পারছিলাম না। ও তখন গল্প করছিল, কীভাবে সে ছোটবেলায় নদীর পাড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকত—শুধু আকাশ দেখার জন্য।
আমি হঠাৎ থেমে বললাম,
“রাইনা, একটা কথা বলব, রাগ করবি না তো?”
ও অবাক হয়ে বলল, “রাগ করব কেন? বল।”
আমি অনেক কষ্টে বললাম,
“তোর সাথে কথা না বললে, তোর মুখ না দেখলে, আমার দিনটা যেন ঠিকভাবে শুরুই হয় না। তুই পাশে না থাকলে কেমন জানি শূন্য শূন্য লাগে। আমি জানি না এটা কী, কিন্তু… আমি তোকে খুব পছন্দ করি। খুব।”
রাইনা কিছুক্ষণ চুপ করে ছিল। চোখ নামিয়ে শুধু বলল,
“তুই জানিস, আমি প্রতিদিন স্কুলে আসার আগে একবার আয়নায় তাকিয়ে ভাবি—আজকে তুই তাকাবি তো? কথা বলবি তো? আমি প্রতিদিন এই ভেবেই সাজি।”
আমরা দু’জনই তখন কাঁঠাল পাতায় ছায়া মিশে থাকা বিকেলে বসে ছিলাম। কোনো শব্দ ছিল না, শুধু একধরনের নিশ্চুপ সম্মতি, চোখের ভাষা। আমার হাত বাড়িয়ে ছিলাম, ও ধীরে ধীরে হাতটা ধরেছিল।
সেই মুহূর্তটা ছিল, আমাদের জীবনের প্রথম ‘প্রেমের ঘোষণা’। কোনো উচ্চ কণ্ঠে নয়, কোনো নাটকীয়তায় নয়—শুধু দু’জন কিশোর-মন এক হয়ে যাওয়ার মুহূর্ত।
---
৫. প্রথম ঝগড়া ও বোঝাপড়া
ভালোবাসা যত গভীর হয়, মনের টানাপোড়েনও ততটা বাড়ে। একদিন একটা ভুল বোঝাবুঝি থেকে বড় একটা ঝগড়া হয়ে গেল।
একটা নোটবুক হারিয়ে গিয়েছিল, যেটা রাইনা আমাকে দিয়েছিল পড়ার জন্য। আমি খেয়াল না করে হারিয়ে ফেলেছিলাম। ওর রাগ গিয়ে পড়েছিল চোখে-মুখে। কথা বলছিল না, পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল।
তিন দিন ওর সাথে কোনো কথা হয়নি। মনে হচ্ছিল, যেন বুকের ভেতর কিছু ভারী হয়ে আছে।
চতুর্থ দিনে আমি চুপচাপ তার ডেস্কে বসে ছিলাম, আর টিফিনের ভেতর ছোট একটা চিঠি রেখে দিয়েছিলাম:
"তোর নোটবুকটা হয়তো হারিয়েছি, কিন্তু তোর স্মৃতি, তোর প্রতিটা শব্দ এখনো আমার সাথে। রাগ করে থাকিস, তবু ফিরিস।"
ও পড়েছিল চিঠিটা। ফিরে তাকিয়ে একটা হালকা হাসি দিয়েছিল। আর পরদিন সকালে আমার ব্যাগে একটা চকলেট পাই—চুপচাপ ক্ষমা পাওয়ার চিহ্ন।
---
৬. সেই বিশেষ মুহূর্ত
একদিন হঠাৎ খবর এলো ওর বাবা বদলি হয়েছে—ওদের পরিবার অন্য শহরে চলে যাচ্ছে। আমাদের জীবনের সবচেয়ে কষ্টদায়ক দিনটা ছিল সেই বিদায়ের দিনটা।
ও বলেছিল, “তুই জানিস, স্কুলের প্রতিটা দিন আমি শুধুই তোর জন্য ভালোবাসতে শিখেছি। কিন্তু এখন কিছুই করার নেই।”
আমি কিছু বলতে পারিনি। শুধু হাত ধরে ছিলাম অনেকক্ষণ।
শেষবারের মতো আমাদের দু’জনের চোখ একসাথে ভিজে উঠেছিল।
---
৭. বিদায়ের আগের দিন
রাইনা চলে যাওয়ার আগের দিন স্কুলে এসেছিল একরকম চুপচাপ ভাঙা চেহারায়। সে দিন ক্লাসে আসেনি, সোজা চলে গিয়েছিল ছাদে। আমি খুঁজতে খুঁজতে সেখানে গিয়ে দেখি, ও দাঁড়িয়ে আছে—হাওয়ায় চুল উড়ছে, চোখে জল।
আমি ধীরে কাছে গিয়ে বললাম, “আর একদিন থাক, প্লিজ।”
সে হাসল, ভেজা চোখে বলল, “থাকা যায় না রে… কিন্তু তুই জানিস, আমি যাব, কিন্তু প্রতিদিন এই স্কুলটাতে ফিরে আসবো… মনে মনে।”
আমরা তখন কিছু না বলেই পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেই নীরবতাই যেন ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় কথা।
---
৮. একটি চিঠি (বিদায়ের পরে)
ও চলে যাওয়ার দুই সপ্তাহ পরে ডাকপিয়নের হাতে একটা খাম এলো আমার নামে। রাইনার হাতের লেখা।
> _"তুই হয়তো ভাবছিস, আমি দূরে চলে গেছি। কিন্তু জানিস, আমি এখনো শেষ বেঞ্চে বসে থাকি—তোর পাশে। তোকে দেখে মন থেকে হাসি আসতো, এখন তা শুধুই স্মৃতি।
তুই হয়তো অনেক বড় হবে, অনেক দূর যাবি… কিন্তু আমার জীবনের সবচেয়ে স্নিগ্ধ মুহূর্তটা, তোর চোখে প্রথম প্রেম দেখা—সেটা আমি সবসময় বাঁচিয়ে রাখবো।
ভালো থাকিস রে। সবসময়।
—রাইনা"_
আমি চিঠিটা পড়ে অনেকক্ষণ নিঃশব্দে বসে ছিলাম। মনে হচ্ছিল, ও এখনো কাছেই আছে।
---
৯. অনেক বছর পর…
আজ আমি নিজেই স্কুলে শিক্ষক। পুরোনো সেই স্কুলেই। মাঝে মাঝে আমি রাইনাদের বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে থাকি। সেখানে নতুন কিছু মুখ হাসে, কেউ কারো দিকে লুকিয়ে তাকায়, কেউ টিফিন ভাগ করে খায়।
কৃষ্ণচূড়া গাছটা এখনো আছে। আর তার ছায়ায় দাঁড়িয়ে আমি এখনো মাঝে মাঝে সেই দিনটার গন্ধ পাই।
প্রেম হয়তো এখনো রয়ে গেছে, কিন্তু সে প্রেম শুধুই স্মৃতিতে। কষ্টের মাঝেও একধরনের আনন্দ। কারণ, রাইনার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত এখনো আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায়।
এরাও সুন্দর সুন্দর গল্পে অবশ্যই আইডিতে ফলো দিয়ে পাশেই থাকুন 🥰 শখের লেখক


·196 Views
·0 Reviews