Upgrade to Pro

আপনার অনুমতি নেই

বিপ্লবীদের কেন টার্গেট?!

আবারো ফ্লু তে আক্রান্ত। প্রিয় জন্মভূমি মীরজাফর ও ঘষেটি বেগমদের প্রেতাত্নাদের ষড়যন্ত্রে উথাল-পাতাল। অনেক কিছুই বলার ছিলো, মন চাইলেও শরীর বিদ্রোহ করছে। শরীর যুক্তি দেয় কি হবে কথা বলে, যে দেশে এক বেলা খাবারের লোভ দেখিয়ে বাসভর্তি করে লোক আনা যায় কথিত আন্দোলন ও জনসমাবেশের জন্যে? কি হবে কথা বলে, যে দেশে তথাকথিত শিক্ষিতরা বিবেক বন্ধক দেয় দলীয় আনুগত্যের কাছে? কি হবে কথা বলে, যে দেশে পাখির মতো গুলি চালিয়ে                                                    শিশুদের হত্যা করা হয়, গরীবের রক্তচোষে লুটেরার দল বিদেশে বিলাসী প্রাসাদ বানায়, সুইস ব্যাংকে ডলারের পাহাড় জমায় – আবার সেই খুনি ও লুটেরাদের পক্ষ দাঁড়াবার মানুষরূপী অমানুষদের অভাব হয় না? 

বিবেক বলে, ঠিক একারণেই আরো বেশী করে কথা বলা দরকার। মানুষ কে জানানো দরকার। সত্য কথা বারবার বলা দরকার। সত্য অনুপস্থিত থাকলে মিথ্যা মাঠ দখল করে ফেলে, আলো নিভে গেলে অন্ধকার গ্রাস করে ফেলে চারপাশ। 

ভারতীয় আধিপত্যবাদ তার শত্রু চিনতে ভুল করে না। কিন্তু মিত্র চিনতে ভুল করে জন্মভূমির আত্নভোলা মানুষগুলো। সে সুযোগটিই নিচ্ছে ভারতীয় আধিপত্যবাদের উচ্ছিষ্টভোগী এদেশীয় দালালগুলো। 

ভারতীয় আধিপত্যবাদ তার পথের কাঁটা ড. ইউনুস কে আর একদিনও সহ্য করতে রাজী নয়। তারা চায় ড. ইউনুস আজকেই পদত্যাগ করে চলে যাক। তাদের প্রচেষ্টা প্রায় সফল হতে চলেছিলো, যখন ড. ইউনুস পদত্যাগ করার কথা ভাবছিলেন। ভারতীয় মেডিয়ায় সাজোসাজো কলরব শুরু হয়ে গিয়েছিলো, ড. ইউনুস পদত্যাগ করছেন। 

এই সংকটময় পরিস্থিতিতে ড. ইউনুসের পাশে দাঁড়ালেন জুলাই বিপ্লবের প্রাণ পুরুষেরা। আবারো ব্যর্থ হয়, ভারতীয় আধিপত্যবাদের চক্রান্ত। ব্যর্থ হবার পরেই ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও তার এদেশীয় দোসরেরা চড়াও হয় তাদের উপর যাদের কারণে ভারতীয় আধিপত্যবাদীদের চক্রান্ত ব্যর্থ হয় – ড. খলিলুর রহমান, ডাক্তার পিনাকী ভট্টাচার্য, ড. কনক সারোয়ার এবং ইলিয়াস হোসেইন প্রমুখ। 

সরাসরি পদত্যাগ দাবী করে ড. খলিলুর রহমানের। বিদেশী নাগরিকত্বের মিথ্যা অভিযোগ তুলে। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র দেশকে ভালোবেসেই অন্যদেশের নাগরিকত্ব নেননি সেই মানুষটির উপর মিথ্যা অভিযোগ তুলতে দ্বিধাবোধ করেনি ভারতীয় আধিপত্যবাদের দালাল ঐসব নীচাশয় লোকগুলো। 

কেনো ড. খলিল কে টার্গেট করা হলোঃ 
• ড. খলিল হলেন সেই ব্যক্তি যার কারণে ওয়াকার মুক্তিকামী ছাত্রজনতার উপর চূড়ান্ত ক্র্যাকডাউন চালাতে পারেনি। যেহেতু ড. খলিল জাতিসংঘের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রধান ছিলেন তাই তিনি তার সাবেক সহকর্মীদের মাধ্যমে এই মহৎ কাজটি করতে পেরেছিলেন। যেমনটি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার Volker Turk বিবিসি HARDtalk এর সাথে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “"The big hope for them was actually our voice, was my voice, and was also what we were able to do and we put the spotlight on the situation. And we actually gave the warning to the army that if they get involved, it means that they may not be allowed to be a troop-contributing country anymore," said Turk. "As a result, we saw changes." কাজেই ড. খলিল হলেন এই মূহুর্তে ভারতীয় আধিপত্যবাদের জাতশত্রু। তাই কোনো রকম রাখঢাক না রেখেই ভারতের RAW এর পোষ্য বিএনপি নেতা সালাউদ্দিনের মাধ্যমে ড. খলিলের পদত্যাগের দাবী করা হয়। বলে রাখা ভালো, যতদূর জানা যায়, ড. ইউনুসও এব্যাপারে সরাসরি জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে কথা বলেছিলেন। এবার আশা করি বুঝতে পারছেন, কেনো ওয়াকার বুকে পাথর চাপা দিয়ে ড. ইউনুসকে মেনে নিয়েছিলো।

• চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রেখে ড. ইউনুস যেভাবে ভারতীয় আধিপত্যবাদের শৃংখল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি সাজাচ্ছেন এবং বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ নিয়ে আসছেন তার পিছনে যে মানুষটি সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছেন তিনি হলেন ড. খলিল। তাই ড. ইউনুস কে থামাতে হলে ড. খলিল কে বিদায় করতে হবে।  

• রোহিঙ্গা ইস্যুতে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারতের স্বার্থে যা যা করা দরকার ছিলো তার সব কিছুই করেছে বাংলাদেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে। কিন্ত ড. খলিল ভারতীয় সেই ছক পাল্টে দিচ্ছেন। তার দক্ষ কূটনীতিতে ভারত রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। 

• বিগত ছয় বছর যাবৎ নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে পিনাকী দা’ ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করেছেন। পিনাকী দা’র এক্টিভিজম ছিলো আগ্নেয়গিরির গর্ভে লাভাকে চরমভাবে উত্তপ্ত করার মতো যা প্রবল কম্পনে উদ্গীরণের অপেক্ষায় ছিলো। বীরশ্রেষ্ঠ আবু সাঈদের শাহাদাৎ ছিলো সেই প্রবল কম্পন, বাকীটা ইতিহাস। পাহাড় ও সমতল থেকে, মাঠ পেরিয়ে, গ্রাম ছাড়িয়ে ছাত্র-জনতার বাধভাঙ্গা জোয়ার আগ্নেয়গিরির লাভার মতো ছড়িয়ে পড়েছিলো। পিনাকী দা’র এই এক্টিভিজমের মেন্টর / গুরু হলেন ড. খলিলুর রহমান, আমাদের প্রিয় খলিল ভাই। সেই ড. খলিল কে উপদেষ্টা পরিষদে তাও আবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে মেনে নেয়া ভারতীয় আধিপত্যবাদের জন্যে খুবই কঠিন। তাই তো তারা পালিত দালাল সালাউদ্দিন ও আমীর খসরুদের মাধ্যমে ড. খলিলের পদত্যাগ দাবী করছে। 

কেনো পিনাকী দা’ কে টার্গেট করা হলোঃ
আমার মনে হয় না এব্যাপারে আর কোনো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের দরকার আছে। 
• শেখ হাসিনা ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের প্রকাশ্য শত্রু হলেন পিনাকী দা। কাদের বিরোধিতার কারণে পিনাকী দা’ এখনো বাংলাদেশে ফিরতে পারছেন না এবং উপদেষ্টা পরিষদে নেই এ কথা বুঝতে নিশ্চয়ই আইনস্টাইন হবার দরকার নেই। যারা বিপ্লবী সরকার গঠন করতে দেয়নি, যারা জুলাই বিপ্লবকে স্বীকার করে না, যারা ভারতীয় আধিপত্যবাদের দালাল ও ফ্যাসিস্ট হাসিনার সমস্ত অপকর্মের দোসর – তারা জানে পিনাকী দা’ কে এবং তিনি কিভাবে তাদের কে বাঁশ দিয়েছেন। কাজেই পিনাকী দা’র পিছনে তারা আগের চেয়েও বেশী আক্রমণাত্বক। 

• ওয়াকার ও ফ্যাসিস্ট হাসিনার শিকড়-বাকড় জেনারেলরা তাদের মিশন যাদের কারণে বাস্তবায়ন করতে পারছে না তাদের অন্যতম হলেন পিনাকী দা’। তাই পিনাকী দা’র পিছনে কচুক্ষেতীদের ভাড়া করেছে ওয়াকার গং। 

• ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার জয় বাংলা করার জন্যে প্রধান ও সবচেয়ে বেশী ভুমিকা রেখেছেন পিনাকী দা। আওয়ামীলীগ, শেখ মুজিব পরিবার ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের আইকন ছিলো এই ধানমন্ডি ৩২। যেহেতু পিনাকী দা হলেন ধানমন্ডি ৩২ জয় বাংলা করার সিপাহসালার তাই স্বাভাবিক ভাবেই তিনি হলেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা, ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও তাদের এদেশীয় দোসরদের প্রধান টার্গেট। 

• সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিপ্লবকে সংগঠিত করে ফ্যাসিবাদী শাসন উৎখাতের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পিনাকী দা। পৃথিবীর ইতিহাসে এজাতীয় ঘটনা এটাই প্রথম। আমি অন্যান্য ইনফ্লোয়েন্সারদের ভূমিকাকেও ছোট করছি না বা অস্বীকার করছি না। আমার মনে হয় একথা সবাই স্বীকার করবেন যে, বুদ্ধিবৃত্তিক বয়ান সৃষ্টির প্রধান ভূমিকাটি ছিলো পিনাকী দা’র। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রধান সিপাহসালার আমারদেশ পত্রিকার মজলুম সম্পাদক শ্রদ্ধেয় ড. মাহমুদুর রহমান। 

ঠিক একই কারণে ড. কনক সারোয়ার ও প্রিয়ভাই ইলিয়াস হোসেইন কে টার্গেট করে ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে ভারত, পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দল আওয়ামীলীগ। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময়ে বাংলাদেশে উনাদের পরিবার পরিজন জেল, জুলুম ও নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন তবুও তারা জন্মভূমির জন্যে নিজেদের দায়িত্বপালন থেকে কখনো পিছপা হননি। 

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনারদের কে সরাসরি টার্গেট করে কিভাবে একের পর এক আক্রমণ চালানো হচ্ছে তা তো আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন। হাসনাত আব্দুল্লাহ সহ অন্যান্যরা হুমকির মুখে সারাক্ষণ। 

এটা নিতান্তই দূর্ভাগ্যের বিষয়, যে বিএনপি বিগত দেড় দশক ফ্যাসিস্ট হাসিনার অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার, সে বিএনপিই ভারতের দালালদের দ্বারা কব্জা হয়ে গেছে। সালাউদ্দিন, আমীর খসরুর মতো ভারতীয় আধিপত্যবাদের প্রকাশ্য দালালেরা দলটির নিয়ন্ত্রণ কুক্ষিগত করেছে ইতিমধ্যেই। 

ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার সংস্কার ও ফ্যাসিস্ট খুনিদের বিচারকে পাশ কাটিয়ে তারা যেনতেন একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়। জনগণের কাছে আজ একথা স্পষ্ট যে, বিএনপি’র এইসব সুবিধাভোগী দালালদের কারণেই ব্যাপক জনসমর্থন ও বিরাট কর্মীবাহিনী থাকা সত্ত্বেও দলটি ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। 

আজকে যখন আমি লিখছি, তখনো ফ্যাসিস্ট হাসিনার ছোবলে মৃত্যুর মিছিল থামেনি। এখনো হস্পিটালের বেডে কাতরাচ্ছেন জুলাই বিপ্লবের আহত যোদ্ধাগণ। এসবের দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে একটি দল নির্বাচন ও ক্ষমতার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে। হতাশা, ক্ষোভ ও অপমানে রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিষপান করেছেন জুলাই আন্দোলনে চোখ হারানো চার যুবক। তারা পুনর্বাসন ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলেন।

কী আর বলবো, বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছি ক্রমশঃ। 

সময় এসেছে নতুন করে শপথ নেবারঃ

“কসম জন্মভূমির মাটি
কসম লাল সবুজের পতাকা
আহনাফ, ওয়াসিম ও আনাসের রক্তের কসম
শহীদের রক্ত মাড়িয়ে দুর্বৃত্তের শাসন
আমি মেনে নেবো না
শহীদের পবিত্র দেহ কে 
কখনো ক্ষমতার সিঁড়ি হতে দেবো না”। 

ইনকিলাব জিন্দাবাদ। 

মইনুল হক 
ডেট্রয়েট, মিশিগান।

Love
Like
Haha
6
Jono Sathi - Bangladeshi Social Media Platform https://jonosathi.com