**উপন্যাসঃ তার পর !**
**অধ্যায়ঃ ০৩**
“দোস্ত, আমাদের একটা সুন্দর ছবি তুলে দে। ছেলে-মেয়েদের দেখাবো, যেন বলতে পারি—তোর বাবা এক সময় কতটা রোমান্টিক ছিল।”
নাঈমের কণ্ঠে একধরনের স্নিগ্ধ উচ্ছ্বাস, আর পাশে বসে থাকা রুহির গাল রঙ বদলাচ্ছিল লাজে।
আমার হাতে আইফোন ১৫ প্রো। ক্যামেরাটা যেন মুহূর্তের ভেতর গল্প বলে দেয়।
আমি ছবি তুলতে তুলতে গাইড করতে থাকি, “নাঈম, তোর ডান হাতটা ওর কাঁধে রাখ।”
ও একটু অস্বস্তিতে হেসে নিল, তবু আমার কথা মেনে নিল।
ওদের সম্পর্কটা ভার্চুয়াল পরিধি ছাড়িয়ে আজ বাস্তবের আলোয় ধরা দিয়েছে।
এটাই প্রথম দেখা—একটা মিষ্টি টেনশন, একটা অপূর্ণতার ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে দুজনের চোখে-মুখে।
আমি রুহিকে বললাম, “আপনার মাথাটা ওর বুকে রাখেন।”
স্কুলে থাকতে ছবি তোলার জন্য আমাকে সবাই ‘মাস্টার’ বলত। আজ সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগল। ছবিগুলো যেন নিখুঁত মুহূর্তের ছাপ হয়ে রয়ে গেল।
ছবি তুলতে তুলতে দুপুর হয়ে এলো।
রুহির চেহারায় তখন ক্ষুধার ছাপ স্পষ্ট।
নাঈম ওয়েটার ডাকল। মাথায় ক্যাপ, চোখে সানগ্লাস, গায়ের রং শ্যামলা, হালকা স্থূল। পোশাক-আশাকে স্পষ্ট সে এই রেস্টুরেন্টের কর্মী।
ভদ্রভাবে জিজ্ঞেস করল, “আপনারা কী নিতে চান, স্যার?”
নাঈম মেনু চাইল। আমাকে জিজ্ঞেস করল, “তুই কী খাবি?”
আমি রুহির দিকে তাকিয়ে বললাম, “ভাবি যা খাবেন, আমিও তাই।”
নাঈম রুহিকে জিজ্ঞেস করলে সে মৃদু হেসে বলল, “তুমি যা খাবে, আমিও তাই খাব। খরচ কম করো, বেশি দরকার নেই।”
আমি অবাক হয়ে গেলাম।
সাধারণত মেয়েরা রেস্টুরেন্টে এসে যতটা না খায়, তার চেয়ে বেশি পকেট ঝালিয়ে নেয়। কিন্তু এই মেয়ে ঠিক উল্টোটা বলছে!
আমার বন্ধুটি খুব আবেগী। প্রেমে পড়া তার স্বভাবে ছিল না।
তবু কীভাবে যেন রুহির প্রেমে জড়িয়ে পড়েছে—অদ্ভুত এক মায়া।
আমি সবকিছুকে যুক্তির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচার করি।
শুরু থেকেই বুঝেছিলাম, এই সম্পর্ক শেষমেশ টিকবে না। রাজশাহী আর ভোলার দূরত্ব, আর তার সঙ্গে বাস্তব জীবনের সীমাবদ্ধতা—সবই বলছিল, এই প্রেম বাস্তবের মাটিতে দাঁড়াবে না।
তবু বন্ধুর আবেগ দেখে একসময় আমিও আশাবাদী হয়ে উঠেছিলাম।
এতক্ষণে অর্ডার দেওয়া হলো—Chicken Spring Roll দুইটা।
আমি বললাম, “তিনটা দে, আমরা তো তিনজন।”
নাঈমের চোখের ভাঁজে কিছুটা সংকোচ চোখে পড়ল। বুঝলাম, ওর পকেটে খুব বেশি টাকা নেই। তবু রুহিকে বুঝতে দিচ্ছে না।
ওয়েটার চলে গেল।
ওকে দেখে কেন যেন একটা অস্বস্তি হচ্ছিল। কোথাও যেন আগে দেখেছি—ঠিক মনে পড়ছে না।
পৃথিবীটা গোল, হয়তো কোথাও দেখা হয়ে যেতেও পারে।
খাবার এসে গেল। আমাকে আলাদা একটা প্লেট দিল, ওরা দুজনে একটাতে খেতে শুরু করল।
আমার ভিতরে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করছিল।
তবে সে অস্বস্তির মাঝেই এক অপূর্ব দৃশ্য ফুটে উঠল।
নাঈম এক টুকরো খাবার তুলে দিল রুহির মুখে।
রুহি চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে রইল।
ওদের চাহনির গভীরতায় আমি যেন নিজেই হারিয়ে যাচ্ছিলাম।
আমার মনে হচ্ছিল, সারাজীবন শুধু অন্যের প্রেম দেখেই কাটিয়ে দেব নাকি?
কোথাও কি আমার জন্যও এমন কেউ অপেক্ষা করছে না?
যার চোখে চোখ রাখলে বুক কেঁপে উঠবে? যাকে ঘিরে থাকবে হারানোর ভয়।
ভালোবাসা মানেই তো সেই ভয়—হারিয়ে ফেলার ভয়। আর সেই ভয় না থাকলে, ভালোবাসাও টেকে না।
আমি কাশলাম। ওরা দুজনেই লজ্জায় রাঙা হয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতে লাগল।
আমিও হাসলাম।
ঠিক তখনই নাঈমের ফোনে অচেনা নম্বর থেকে কল আসে।
ও ফোনটা কানে নিতেই ওপাশ থেকে একটা কণ্ঠ—
“তোমার নাম কী? তুমি কোথায় থাকো?”
নাঈম থমকে যায়।
“আপনি কে? কোনো ভূমিকা না দিয়েই পরিচয় চাইছেন?”
ওর চোখে চিন্তার রেখা ফুটে ওঠে।
আমি নম্বরটা দেখতে চাইলাম। নম্বরটা শেষ হচ্ছিল ২০ দিয়ে।
রুহি হঠাৎ ফিসফিসিয়ে বলল,
“ফোনটা কেটে দাও! এটা আমার ভাইয়ার নম্বর!”
আমরা সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
নাঈম ধীরে ফোনটা কেটে রাখল।
আর আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম—এই গল্পটা কি এখানেই শেষ, না কি শুরু হলো নতুন কোনো অধ্যায়?
Writer:
#rifat_pir
#চলবে
এরকম আরো গল্প করতে ফেসবুকে আমাকে F O L L O W (
https://www.facebook.com/profile.php?id=61575602968495) করুন
**উপন্যাসঃ তার পর !**
**অধ্যায়ঃ ০৩**
“দোস্ত, আমাদের একটা সুন্দর ছবি তুলে দে। ছেলে-মেয়েদের দেখাবো, যেন বলতে পারি—তোর বাবা এক সময় কতটা রোমান্টিক ছিল।”
নাঈমের কণ্ঠে একধরনের স্নিগ্ধ উচ্ছ্বাস, আর পাশে বসে থাকা রুহির গাল রঙ বদলাচ্ছিল লাজে।
আমার হাতে আইফোন ১৫ প্রো। ক্যামেরাটা যেন মুহূর্তের ভেতর গল্প বলে দেয়।
আমি ছবি তুলতে তুলতে গাইড করতে থাকি, “নাঈম, তোর ডান হাতটা ওর কাঁধে রাখ।”
ও একটু অস্বস্তিতে হেসে নিল, তবু আমার কথা মেনে নিল।
ওদের সম্পর্কটা ভার্চুয়াল পরিধি ছাড়িয়ে আজ বাস্তবের আলোয় ধরা দিয়েছে।
এটাই প্রথম দেখা—একটা মিষ্টি টেনশন, একটা অপূর্ণতার ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে দুজনের চোখে-মুখে।
আমি রুহিকে বললাম, “আপনার মাথাটা ওর বুকে রাখেন।”
স্কুলে থাকতে ছবি তোলার জন্য আমাকে সবাই ‘মাস্টার’ বলত। আজ সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগল। ছবিগুলো যেন নিখুঁত মুহূর্তের ছাপ হয়ে রয়ে গেল।
ছবি তুলতে তুলতে দুপুর হয়ে এলো।
রুহির চেহারায় তখন ক্ষুধার ছাপ স্পষ্ট।
নাঈম ওয়েটার ডাকল। মাথায় ক্যাপ, চোখে সানগ্লাস, গায়ের রং শ্যামলা, হালকা স্থূল। পোশাক-আশাকে স্পষ্ট সে এই রেস্টুরেন্টের কর্মী।
ভদ্রভাবে জিজ্ঞেস করল, “আপনারা কী নিতে চান, স্যার?”
নাঈম মেনু চাইল। আমাকে জিজ্ঞেস করল, “তুই কী খাবি?”
আমি রুহির দিকে তাকিয়ে বললাম, “ভাবি যা খাবেন, আমিও তাই।”
নাঈম রুহিকে জিজ্ঞেস করলে সে মৃদু হেসে বলল, “তুমি যা খাবে, আমিও তাই খাব। খরচ কম করো, বেশি দরকার নেই।”
আমি অবাক হয়ে গেলাম।
সাধারণত মেয়েরা রেস্টুরেন্টে এসে যতটা না খায়, তার চেয়ে বেশি পকেট ঝালিয়ে নেয়। কিন্তু এই মেয়ে ঠিক উল্টোটা বলছে!
আমার বন্ধুটি খুব আবেগী। প্রেমে পড়া তার স্বভাবে ছিল না।
তবু কীভাবে যেন রুহির প্রেমে জড়িয়ে পড়েছে—অদ্ভুত এক মায়া।
আমি সবকিছুকে যুক্তির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচার করি।
শুরু থেকেই বুঝেছিলাম, এই সম্পর্ক শেষমেশ টিকবে না। রাজশাহী আর ভোলার দূরত্ব, আর তার সঙ্গে বাস্তব জীবনের সীমাবদ্ধতা—সবই বলছিল, এই প্রেম বাস্তবের মাটিতে দাঁড়াবে না।
তবু বন্ধুর আবেগ দেখে একসময় আমিও আশাবাদী হয়ে উঠেছিলাম।
এতক্ষণে অর্ডার দেওয়া হলো—Chicken Spring Roll দুইটা।
আমি বললাম, “তিনটা দে, আমরা তো তিনজন।”
নাঈমের চোখের ভাঁজে কিছুটা সংকোচ চোখে পড়ল। বুঝলাম, ওর পকেটে খুব বেশি টাকা নেই। তবু রুহিকে বুঝতে দিচ্ছে না।
ওয়েটার চলে গেল।
ওকে দেখে কেন যেন একটা অস্বস্তি হচ্ছিল। কোথাও যেন আগে দেখেছি—ঠিক মনে পড়ছে না।
পৃথিবীটা গোল, হয়তো কোথাও দেখা হয়ে যেতেও পারে।
খাবার এসে গেল। আমাকে আলাদা একটা প্লেট দিল, ওরা দুজনে একটাতে খেতে শুরু করল।
আমার ভিতরে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করছিল।
তবে সে অস্বস্তির মাঝেই এক অপূর্ব দৃশ্য ফুটে উঠল।
নাঈম এক টুকরো খাবার তুলে দিল রুহির মুখে।
রুহি চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে রইল।
ওদের চাহনির গভীরতায় আমি যেন নিজেই হারিয়ে যাচ্ছিলাম।
আমার মনে হচ্ছিল, সারাজীবন শুধু অন্যের প্রেম দেখেই কাটিয়ে দেব নাকি?
কোথাও কি আমার জন্যও এমন কেউ অপেক্ষা করছে না?
যার চোখে চোখ রাখলে বুক কেঁপে উঠবে? যাকে ঘিরে থাকবে হারানোর ভয়।
ভালোবাসা মানেই তো সেই ভয়—হারিয়ে ফেলার ভয়। আর সেই ভয় না থাকলে, ভালোবাসাও টেকে না।
আমি কাশলাম। ওরা দুজনেই লজ্জায় রাঙা হয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতে লাগল।
আমিও হাসলাম।
ঠিক তখনই নাঈমের ফোনে অচেনা নম্বর থেকে কল আসে।
ও ফোনটা কানে নিতেই ওপাশ থেকে একটা কণ্ঠ—
“তোমার নাম কী? তুমি কোথায় থাকো?”
নাঈম থমকে যায়।
“আপনি কে? কোনো ভূমিকা না দিয়েই পরিচয় চাইছেন?”
ওর চোখে চিন্তার রেখা ফুটে ওঠে।
আমি নম্বরটা দেখতে চাইলাম। নম্বরটা শেষ হচ্ছিল ২০ দিয়ে।
রুহি হঠাৎ ফিসফিসিয়ে বলল,
“ফোনটা কেটে দাও! এটা আমার ভাইয়ার নম্বর!”
আমরা সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
নাঈম ধীরে ফোনটা কেটে রাখল।
আর আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম—এই গল্পটা কি এখানেই শেষ, না কি শুরু হলো নতুন কোনো অধ্যায়?
Writer: #rifat_pir
#চলবে
এরকম আরো গল্প করতে ফেসবুকে আমাকে F O L L O W (https://www.facebook.com/profile.php?id=61575602968495) করুন